মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সেফটিক ট্যাংক থেকে শাহিদা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রাম থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত শাহিদা বেগম একই গ্রামের মাওলানা আবদুল মমিনের স্ত্রী। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চৌদ্দগ্রাম-নাঙ্গলকোট সার্কেল) নিশাত তাবাস্সুম।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মত সোমবার ফজরের নামাজের সময় নিহত শাহিদা বেগমের স্বামী মাওলানা আবদুল মমিন স্ত্রীকে নামাজ পড়তে ঘুম থেকে ডেকে দিয়ে নিজে বাড়ীর পাশে মসজিদে চলে যান। মসজিদ থেকে তিনি বাসায় ফিরে স্ত্রীকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার সাথে যোগ হয় প্রতিবেশিরা। সম্ভাব্য সকল স্থানে ব্যাপক খোঁজ করেও শাহিদা বেগমকে পাওয়া যায়নি। এ সময় স্থানীয়রা ঘরের পিছনের সেফটিক ট্যাংকের কিছুটা দূরে শাহিদা বেগমের ব্যবহৃত জুতো এবং টানাহেচড়া করার দাগ মাটিতে লক্ষ্য করে। জুতো এবং দাগের সূত্র ধরে স্থানীয়রা বাড়ীর পাশের একটি সেফটিক ট্যাংকের উপরিভাগে মাথা নিচু করা পা উপরের দিকে উঠানো অবস্থায় শাহিদা বেগমের লাশ দেখতে পায়। সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেফটিক ট্যাংক থেকে লাশটি উদ্ধার করে।
নিহতের স্বামী মাওলানা আব্দুল মমিন বলেন, আমি ফজর নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বাহির হয়ে মসজিদে যাওয়ার সময় আমার স্ত্রী শাহিদা বেগমকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে নামাজ পরার জন্য বলে মসজিদে চলে যাই। যাওয়ার সময় তাকে ঘরের বাহিরের লাইট বন্ধ করতে বলে যাই। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে ফিরে এসে গেইটের তালা খুলে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে দেখি লাইটগুলো জালানো অবস্থায় রয়েছে। ঘরের দরজা বন্ধ। পিছনের দরজাটি খোলা থাকলেও ঘরের ভিতরে আমার স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করি। পরে প্রতিবেশিদেরকে জানালে তারা সহ সম্ভাব্য সকল স্থানে আমার স্ত্রীকে খোঁজ করি। এক পর্যায়ে উপস্থিত প্রতিবেশিদের কেউ একজন আমার স্ত্রীর ব্যবহৃত জুতো এবং তাকে টানা হেচড়া করার দাগ মাটিতে দেখতে পায়। সে সূত্র ধরে ঘরের পাশের সেফটিক ট্যাংকের কাছে গিয়ে মাথা নিচু করা এবং পা উপরের দিকে অবস্থায় আমার স্ত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখি। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ধারণা করছি কেউ আমার স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি এ নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার দাবি জানাচ্ছি।
নিহতের মেয়ের জামাতা মো: শাহাদাৎ হোসেন মজুদার বলেন, আমার শ্বশুরদের সাথে উনার ভাইদের জায়গা-সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। এই নিয়ে এলাকাতে একাধিক শালিস-দরবার হয়েছে। তারা আমার শ্বশুরদেরকে বিভিন্ন সময় দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলো। আজ সকালে সেফটিক ট্যাংকে আমার শাশুড়ীর লাশ পাওয়াটা রহস্যজনকই মনে হচ্ছে। তাকে কেউ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শাহিদা বেগমের লাশ বাড়ীর পাশের সেফটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কেউ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়। তবে, কিভাবে তাকে হত্যা করে হয়েছে ময়নাতদন্তের রির্পোট হাতে পেলে জানা যাবে। হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।