কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় জেলার মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা। বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বীকৃতির এই সনদ প্রদান করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদফতর খাদি কাপড়কে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা এই শিল্পের ঐতিহ্য ও গৌরবকে আরও দৃঢ় করে।
১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশীয় পণ্য ব্যবহারের আহ্বানে তখন খাদির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ঐতিহ্যবাহী এই কাপড় ‘খাদের চরকা’য় তৈরি হওয়ায় এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদি তৈরিতে উৎসাহ দেন, যা আজও কুমিল্লার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এরপর থেকেই কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের স্বীকৃতির জন্য কাজ শুরু হয়। অবশেষে খাদি কাপড়ের স্বীকৃতি পেয়ে ব্যবসায়ী ও ঐতিহ্যপ্রেমীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।
কুমিল্লার খাদি ঘরের মালিক ও প্রবীণ ব্যবসায়ী প্রদীপ রাহা কান্তি বলেন, _“এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আশা করা যায়, কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে থাকা কুমিল্লার খাদি বাণিজ্যিকভাবে সফলতা অর্জন করবে। রাষ্ট্র এই শিল্পের প্রসারে কাজ করবে।”_
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, _“কুমিল্লার খাদির একটি রাজনৈতিক চেতনা রয়েছে। এটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একটি স্বদেশী পণ্য, যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।”_
কুমিল্লার ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি—রসমালাই ও খাদি—ইতোমধ্যে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। বাকি রয়েছে বিজয়পুরের মৃৎশিল্প, যা দ্রুতই স্বীকৃতি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই জিআই স্বীকৃতি কুমিল্লার খাদি শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ঐতিহ্যের এই পণ্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সমাদৃত করতে সরকারি সহযোগিতা ও ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।